এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার::
ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল, লেমশিখালি, মহেশখালী উপজেলার মাতাবাড়ি, ধলঘাটা, কুতুবজুম, টেকনাফের সবরাং, সেন্টমার্টিন ও শাহাপরির দ্বীপ, পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়াপাড়া, নুনিয়াছটা, এসএমপাড়া, খুরুস্কুল, পোকখালী, ইসলামপুর ও চকরিয়া উপজেলায় সহ ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওইসব এলাকা অন্তত দেড় লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। নৌকা দুর্ঘটনা ও দেয়াল চাপায় ২ জন নিহত হয়েছে। তার মধ্যে কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিলে নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষে মাষ্টার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫) ও উত্তর ধুরুংয়ে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে আবদুর রহমানের ছেলে মো: ইকবাল ( ৩৫) মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আহত হয়েছে আরো ৫০ জন। জেলায় এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ৬ নং বিপদ সংকেত বহাল রেখেছে আবওহাওয়া অফিস। এসব এলাকায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি, চিংড়িঘের, শুটকিমহাল বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী মুল্যায়ন সভা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানো মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি আগে থেকে সম্পন্ন করে রাখায় বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে জেলার মানুষ।
ঘূর্ণিঝড়ের আগে ১৭ হাজার ৪৩৪ পরিবারের ৮৭ হাজার ১৭০ জনকে এসব এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। উপকূলীয় এলাকার ১৫৮ আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের সরিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া ও নুনিয়াছড়া থেকে আড়াই হাজারের অধিক মানুষ সরিয়ে এনে আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুলে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
একইভাবে উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিতে গিয়ে আরো অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় আহত হয়েছে অন্তত দশজন। জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭৪৩৪টি পরিবারের ৮৭১৭০ জন লোককে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মাঝে শুকনো চিড়া, মুড়ি ও গুড় বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় ২ জন নিহত, শহরে ১০ জন ও জেলার অন্যন্য স্থানে আরো ১৫ জন আহত হয়েছে। কিন্তু বেসরকারীভাবে হতাহতের সংখ্যা ৫২ জন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান জানান, জেলার কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ২৮ কিলোমিটার বেরিবাঁধ বিধস্ত হয়েছে। এসব এলাকাগুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় অন্তত ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি হয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। তিনি আরো জানান, বিধ্বস্ত বেরিবাঁধ মেরামতের জন্য জরুরী অর্থ চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, জেলায় ৬ নং বিপদ সংকেত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯১ মিলিমিটার। ঘুর্ণিঝড় রোয়ানোর প্রভাব জেলায় আশংকামুক্ত বলে জানায়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মুরাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্নভাবে আহত হয়ে ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে মোঃ সাদেক, আনোয়ারা বেগম, মোঃ রুবেল, রিয়াদ, মোঃ ফারুক, খাইরুল কবির, রাবেয়া বেগম, জুনাইদ ও মেহেদী হাসান। আহতরা সবাই আংশকামুক্ত।
এদিকে, পুরো জেলায় ২ শতাধিক কাচা ঘড়-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে ৫০০ শতরেও বেশী গাছপালা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাছ পড়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। দুপুরে বিধবস্ত গাছপালা সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে। কিন্ত কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও থেকে খুরুশকুল ও জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ দিনভর বিচ্ছিন্ন ছিল।
এছাড়া জেলায় রোয়ানোর প্রভাবে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের ও ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক পরিবার।
পাঠকের মতামত